ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদের সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তিনি বাংলাদেশে আছেন, নাকি সীমান্ত পার হয়ে বিদেশে চলে গেছেন—এ বিষয়েও নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি বলে জানিয়েছেন পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অপরাধ ও অপস) খন্দকার রফিকুল ইসলাম।
রোববার বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি। অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২ ও দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অগ্রগতি জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
অতিরিক্ত আইজিপি রফিকুল ইসলাম বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন। আসামি সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তবে কোনোটিই এখনো নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। ফয়সাল করিমের অবস্থান শনাক্তে পুলিশ, র্যাব, ডিবি ও বিজিবিসহ সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী কাজ করছে।
সাধারণত এ ধরনের সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী উপস্থিত থাকলেও আজ তিনি কিংবা স্বরাষ্ট্রসচিব নাসিমুল গনি কেউই উপস্থিত ছিলেন না। এ বিষয়টি ঘিরে রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে।
উল্লেখ্য, ওসমান হাদি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে অগ্রগতির বিষয়ে গত শনিবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরীকে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দেয় ইনকিলাব মঞ্চ। সময়মতো জবাব না এলে তাঁদের পদত্যাগ দাবি করার ঘোষণা দেয় সংগঠনটি।
এই প্রেক্ষাপটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, ডিবি ও বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রধান আসামির বিষয়ে নানা ধরনের তথ্য আসছে, তবে তিনি দেশে নাকি বিদেশে—এ বিষয়ে কোনো নিশ্চিত তথ্য নেই। হত্যার প্রকৃত কারণ এখনো উদ্ঘাটন করা যায়নি, তবে এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে বলে তদন্তে প্রাথমিকভাবে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রধান আসামির একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে তিনি পাশের দেশে অবস্থান করছেন—এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ছবিটি তাঁরা দেখেছেন, তবে সেটি ভারতের কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত আইজিপি রফিকুল ইসলাম বলেন, কোনো ঘটনায় কখনো আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা যায়, আবার কখনো সময় লাগে। জনদাবিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসামিকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
বিজিবি ময়মনসিংহ সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ মামলায় মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন হিসেবে ‘ফিলিপ’ নামে এক ব্যক্তির নাম উঠে এসেছে। তাঁকে গ্রেপ্তারে বিজিবি সর্বশক্তি প্রয়োগ করছে এবং গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।
শরিফ ওসমান বিন হাদি ছিলেন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পরিচিত মুখ ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র। তিনি ঢাকা–৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারে সক্রিয় ছিলেন। গত ১২ ডিসেম্বর মতিঝিল এলাকায় প্রচার শেষে ফেরার পথে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে মোটরসাইকেল থেকে গুলি করে তাঁকে হত্যা করা হয়। ছয় দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৮ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ফয়সাল করিম মাসুদকে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও তাঁর মা–বাবা, স্ত্রী ও শ্যালকসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এখনো পর্যন্ত তাঁর অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য দিতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
